এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে তথ্য

এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে তথ্য



📌ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের সকলের জেনে রাখা ভাল!
**************************************************
📌ডেঙ্গুজ্বর কি ?
*****************
ডেঙ্গুজ্বর একধরনের ভাইরাস বাহিত একটি রোগ। ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই এবং অধিকাংশ রোগীই আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু রোগের মারাত্মক ধরনের আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে।
*
📌কিভাবে হয়?
**************
এডিস নামে এক ধরনের মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়।
*
📌ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কি করে বুঝবেন ?
**************************************
রোগের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হলো-
1. তীব্র জ্বর-১০৫ ফারেনহাইট(৪০.৬ সে.) পযন্ত।
2. সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা যা কিছুদিনের জন্য চলে গিয়ে পুনরায় দেখা দেয়।
3. তীব্র মাথা ব্যথা, পিঠ ব্যথা অথবা দুটোই।
4. চোখের পিছনে ব্যথা।
5. অস্থি সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা।
6. বমি বমি ভাব এবং বমি।
*
📌ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর !
****************************
এটি রোগের মারাত্মক একটি ধরণ। এই জ্বর মৃদু জ্বরের মতোই শুরু হয়। পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যেই অবস্থা অধিকতর খারাপ হতে শুরু করে। এই জ্বরে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যা গুলো হয়-
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী রক্ত কোষের(Platelateবা অনুচক্রিকা) সংখ্যা কমে যায় ফলে চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয় এবং নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। অনেক সময় মৃত্যু পযন্ত হতে পারে।


📌ডেঙ্গু শক সিনড্রোম !
***********************
এটি ডেঙ্গুজ্বরের সবচেয়ে মারাত্মক ধরন। এই জ্বরে মৃদু ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি অন্যান্য যে সমস্যা গুলো হয়-
1.তীব্র পেটে ব্যথা
2.ঘন ঘন বমি
3.জ্ঞান হারানো
4.অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
5.রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
6.এতে মৃত্যু পযন্ত হতে পারে


📌কখন ডাক্তার দেখাবেন?
**************************
ডেঙ্গুজ্বরের যে কোন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।


📌কি কি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে?
*********************************************** 
সাধারণত লক্ষণ দেখেই ডাক্তাররা বুঝতে চেষ্টা করেন ডেঙ্গু 
হয়েছে কিনা,তবে এর পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষাও (Dengue NS1 Antigen/ELISA, igG, igM, Platelets Count) করা হয়ে থাকে। রক্ত পরীক্ষা করে রোগের ধরন ও মাত্রা বোঝা হয়।


📌কি কি চিকিৎসা আছে ?
***************************
1. বেশি করে তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহন
2. প্যারাসিটামল ঔষধ সেবন
3. হাসপাতালে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা
4. দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া
5. রক্তচাপ পরীক্ষা
6. রক্ত ঘাটতি পূরণের জন্য রক্ত দেওয়া


📌পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা !
*****************************
বমি এবং জ্বর থেকে জলশূণ্যতা পূরণের জন্য রোগীকে বেশি করে স্যালাইন ও অন্যান্য হালকা অথচ পুষ্টিকর তরল খাবার খেতে দিতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তপাত হতে পারে এমন কাজ করা যাবে না।
আক্রান্ত রোগীকে মশারীর ভিতর রাখতে হবে। রোগির রক্তের গ্রুপ জেনে রক্তের কার্ড সংগ্রহ করে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারবেন এমন ব্যক্তির সন্ধান করে রাখতে হবে।
কখনোই নিজে থেকে কোন ব্যথানাশক ঔষধ খাবেন না, তাতে ডেঙ্গুজ্বরের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।
শোনা যায়, পেঁপে ও পেঁপে পাতার রস এই রোগে ভীষণ কার্যকরী। কিন্তু পেঁপে পাতার রস অনুচক্রিকার সংখ্যা বাড়াতে পারে এমন শোনো গেলেও বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই।


📌ডেঙ্গুজ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
*****************************************
1. ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহনকারী মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই দিনের বেলা মশারী টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। ফুল প্যান্ট পরিধান করুন। দিনের বেলায় কোনোমতেই মশা কামড়াতে দেবেন না।
2. ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সবসময় মশারীর মধ্যে রাখতে হবে যাতে করে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে।
3. বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাইরের কাজের সময় পায়ে ক্লিনিক প্লাস শ্যাম্পু মেখে কাজ করুন। এতে ত্বকের ক্ষতি হবে না অথচ মশা কামড়াবে না। এই শ্যাম্পুটির বিশেষে গন্ধের জন্য মশা কাছে আসে না।
4. বাড়ির আশেপাশে ভাঙ্গা ফুলের টব, ভাঙ্গা ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা বেসিন, অব্যবহৃত টায়ার, মুখ খোলা জলের ট্যাঙ্ক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, পলিথিন এবং ঘরের আশেপাশে যেন জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ধোঁয়া দিতে হবে।


📌প্রশ্ন.৫. ডেঙ্গুজ্বরে কি ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর.ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত: ভাইারাসে আক্রান্ত হওয়ার পরের কয়েক সপ্তাহ বা মাস পযন্ত কোন কোন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ক্লান্তিবোধ, অবসন্নতা দেখা দেয়।
মারাত্মক ডেঙ্গুজ্বর থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। এর ফলে যে সমস্যা গুলো হতে পারে সেগুলো হলো-অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,শক এমনকি এ ধরনের সমস্যা থেকে মৃত্যু। অনেকসময় সু্‌স্থ্য হলেও অনেকের যকৃত, রক্তনালী এবং মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে। কারো কারো ব্রেন ফগিং ও হতে পারে।

পরিশেষে বলি, ডেঙ্গুর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে কোনো ব্যক্তি একা কিছুই করতে পারবেন না। প্রশাসনের উদ্যোগে সবাই মিলে উদ্যোগ নিলেই এবং বিধি নিষেধ মেনে চললে তবেই ডেঙ্গুকে এড়ানো যাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল প্রতিবছর ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর সরকারী উদ্যোগ দেখা যায়। কিন্তু এভাবে ডেঙ্গুকে এড়ানো যায় না। গ্রীষ্মের শেষে বর্ষা আসার আগে থেকে প্রশাসনিক উদ্যোগ, সতর্কতা ও জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা জরুরী।



Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form