খেলারাম খেলে যা pdf Download | khelaram khele ja pdf

খেলারাম খেলে যা pdf Download | khelaram khele ja pdf



উপন্যাসঃ খেলারাম খেলে যা Pdf Download – khelaram khele ja pdf
লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক।
প্রকাশকঃ প্রথমা।
প্রচ্ছদঃ মাসুক হেলাল।


খেলারাম খেলে যা pdf Download | khelaram khele ja pdf


বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক কি সৈয়দ শামসুল হক সর্মথন করেছিল? এ প্রশ্নটি মনে আসলো তাঁর খেলারাম খেলে যা উপন্যাসটি পড়ে শেষ করা মাত্রই। এ উপন্যাস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক যেমন বলেছিলেন – ‘ খেলারাম খেলে যা সবচাইতে বেশি ভুল বোঝা উপন্যাস।’ তেমন ভুল বোঝা থেকেই হয়তো আমার মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি মনে আসলো – এ যাবত কাল খোলামেলা যৌনতা কাতর যে তিনটি উপন্যাস আমি পড়েছি তার মধ্যে কোন উপন্যাসটি আমার পড়া যৌনতা সম্পর্কিত রগরগে বিবরণ দিয়েছে। প্রসঙ্গত উপন্যাস তিনটি হলো নবোকভের লোলিটা, খুশবুন্ত সিংহ এর প্রমীলা সংসর্গ( কোম্পানি অব ওম্যান) এবং আলোচ্য উপন্যাস।

তৃতীয় প্রশ্ন মনে আসলো-‘ খেলারাম খেলে যা -‘যে সময়ের উপন্যাস, সেই সময় এতো খোলামেলা জীবন, যাপন মানুষের ছিলনা! তাহলে তিনি এটা লিখলেন কি করে?
প্রথম প্রশ্নটি আমাদের দেশের একজন গড়পড়তা সাধারন পাঠকের যেমন মনে আসে, তেমন আমারো মনে আসছে। কিন্তুু উপন্যাস তো লেখকের ব্যক্তি জীবন নয়, তাই অপরিণত,অপরিপক্ক পাঠকের প্রশ্ন হিসেবে নিজের প্রশ্নকেই ইম্যাচিউরড প্রশ্ন বলে খারিজ করে দিই।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর নিজেকে এভাবেই দিই- উপন্যাস তিনটির প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও একজন লম্পটের চরিত্র এবং তার ভিতরের অন্তঃদহন বয়ানে তিনটিই সমান।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে খুঁজে পাই এভাবে- লেখক তো কালোত্তীর্ণও বটে। আর আট/ দশজনের মানুষের কল্পনায় বা চোখে যা ধরা পড়েনা, লেখকের চোখে তা ধরা পড়ে। লেখক তাঁর কল্পনার রাডার দিয়ে দিগন্তের ওপারেও দেখতে পান।
‘ খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবর। তখনকার সময়ের (রচনা কাল ১৯৬৯-৭০) একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক। তিনি ধাঁধার একটি অনুষ্ঠান করে জনপ্রিয়তা পায়। তার কথার জাদুতে সম্মোহিত হয় দর্শক। বাস্তবেও তার সংস্পর্শে আসা মানুষজন মোহিত হয় বাবরের বাগ্মিতায়, চলনে ও বলনে।

কিন্তুু একজন স্মার্ট পুরুষের আড়ালে যৌনতা কাতর কামুক একটা চরিত্র লুকিয়ে আছে তা জানে কয়জন?
আমরা দেখতে পাই লতিফা নামে একজন কিশোরর্ত্তীণ বালিকার টানে সে ময়মনসিংহ চলে আসে৷ লতিফার বাবা বাবরকে একজন সেলিব্রিটি হিসেবেই ট্রিট করে। লতিফা থেকে মিসেস নফিস। কিন্তুু কেন জানি বিবাহিত নারীতে তার অনীহা। সে যায় বাবলীর কাছে। বাবলী থেকে জাহেদা।
জাহেদাকে নিয়ে রংপুর যায়। রংপুর এ জাহেদা- বাবর একসাথে থাকে। স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক।
এই সম্পর্ক থেকে জাহেদা চায় তাদের সম্পর্ক সামাজিক মর্যাদা পাক। বাবর বিয়ে করুক জাহেদাকে।
কিন্তুু লম্পট বাবর বিয়ে করবেনা, সে জাহেদার পর আরেক নারীতে যাওয়ার চিন্তা করে।

বাবরের এই লাম্পট্য চিন্তার মাঝখানে আসে ‘ হাসনু।’ এই ‘ হাসনু’ আসলেই বাবরের ভিতরের জ্বালা বেড়ে যায়। বিশ্ব সংসারের সমস্ত কষ্ট তার বুক ভার করে ফেলে৷ হাসনু তার বোন। যখন তারা ছোট ছিল বর্ধমানে- তখনকার সময়ের এক সাম্প্রদায়িকতার নির্মম বলি হয় হাসনু। কোন এক সন্ধ্যায় বাবর এবং হাসনু বাড়ি ফেরার সময় ছোট কিশোরী হাসনুকে বাবরের হাত থেকে টেনে নিয়ে যায় কয়েকজন পুরুষ। কিশোর বাবর বোনের চিৎকার, কান্না শুনেও দৌড়ে নিজে পালিয়ে যায়।
কিশোর বয়সে তার এই পালিয়ে যাওয়া কিছুতেই ক্ষমা করতে পারেনা বাবর।

বাবর যখন হাসনুকে নিয়ে আমাদের পাঠকের সামনে দাঁড়ায় তখন বাবরকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত করি আমরা। এখানেই ‘ খেলেরাম খেলে যা’ উপন্যাসের মুল ফোকাস। একজন কামুক আবার মানবিক হয় কি করে?
তাই যখন জাহেদা বাবরের ভালবাসার স্বীকৃতি আদায় না করতে পেরে ঢাকায় ফেরার পথে গাড়ি থেকে রাগ করে নেমে শিকার হয় পুরুষ লালসার তখন বাবর জাহেদাকে রক্ষা করতে যেয়ে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে জাহেদাকে নিয়ে গাড়িতে আসলে দুজনেই গাড়ি দূর্ঘটনায় পতিত হয়। সেখানে শেষ লাইনে যখন লেখক লেখেন ‘ তারপর সেই নক্ষত্র প্রতিফলিত নদীতে গড়িয়ে পড়ে জাহেদাকে নিয়ে,বাবরকে নিয়ে। এ আরো একজন ছিল, সে হাসনু।’


তখনই আমাদের মন থেকে লম্পট বাবরের চেহারা মনে না এসে, আসে বোধের ক্ষরণে তাড়িত বাবরের মুখশ্রী।
রগরগে কাহিনী পড়ে এসেছি এটা আর মনে আসেনা, মনে আসে দহনে ভোগা বাবরের চেহারা।
যাই হোক-‘ খেলারাম খেলে যা’ একটি বির্তকিত, সমালোচিত, আলোচিত উপন্যাস।
এ উপন্যাসে লম্পট বাবরের মাধ্যমেই যেমন উম্মোচিত হয়েছে কার্মাত পুরুষের চরিত্র, তেমনিভাবে কিশোরবেলায় বোনের হাত ছেড়ে দেওয়া মানবিক বাবরকেও আমরা দেখতে পাই।




Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form