বিশ শতকের মেয়ে উপন্যাস pdf | ড. নীলিমা ইব্রাহিম pdf
বই : আমি বীরাঙ্গনা বলছি
লেখিকা : নীলিমা ইব্রাহিম
"কোনকালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।"
কাজী নজরুলের এই কবিতার পঙক্তি দুইটি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে কি চরম সত্য তাইনা?
"কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।"
আবার এই দুইটি পঙক্তিও যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো হাজারো মা-বোনের জন্যই লিখা।
নাম-পরিচয়, ইতিহাস না জানা কতশত নারী আমাদের স্বাধীনতার জন্য হারিয়েছিল তাদের সবকিছু। কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছে তারা?
একটি খেতাব- বীরাঙ্গনা, এটুকুই!!
এরকমই সাত বীরাঙ্গনার আত্মকাহিনী নীলিমা ইব্রাহিম তুলে ধরেছেন আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটিতে।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাড়ির পুরুষেরা দেশ স্বাধীন করতে নিজের জীবন বাজি রেখেছিল। কিন্তু দেশকে রক্ষা করতে পেছনে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল নিজের মা, বোন, স্ত্রী, সন্তানকে।পাকবাহিনীর হাত থেকে দেশ রক্ষা পেলেও রক্ষা পায়নি ঘরের মেয়েরা। কি নির্মম নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছিল তাদের। জিন্দা লাশ হয়ে দিনের পর দিন অন্ধকারে বসে অপেক্ষা করেছিল স্বাধীনতার এক চিলতে আলোর জন্য। তাদের অপেক্ষা বৃথা যায়নি। সেই অন্ধকার ঘুপচির কোনো এক ফাঁকফোকর দিয়ে স্বাধীনতার আলো এসে পড়েছিল।
কিন্তু এই স্বাধীনতার আলো কি সবার চোখে সয়েছিল?
সয়নি। বরং সমাজ, পরিবার, আপন মানুষেরাই তাদের চোখের সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছিল এক কালো পর্দা; অচ্ছুৎ, বহু পুরুষকে দেহদানকারী, ধর্ষিত, কলঙ্কিত এরকম বহু বিশেষণের পর্দা।
আশায় বুক বেঁধে যে নারীরা ফিরেছিল ঘরে, তাদের বুক ভেঙে আবার ছাড়তে হয় ঘর, ছাড়তে হয় আপনজনদের।
তারা, মেহেরজান, শেফালী, ময়না কিংবা মিনা-র মত হতভাগ্য বীরাঙ্গনাদের পরিবার কিংবা আপনজনের কাছে থাকতে দেয়নি সমাজ। তবে কিছু ব্যতিক্রম তো ছিল। ফাতেমা কিংবা রীনা-কে কী গভীর মমতায়ই না আগলে রেখেছিল তাদের পরিবার।
এই সাত বীরাঙ্গনার মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে সমাজ, পরিবার আর নিজের সাথে যুদ্ধের কাহিনী নীলিমা ইব্রাহিম গল্পে গল্পে জানিয়েছেন পাঠককে। প্রাঞ্জল, সাবলীল লেখনীতে ফুটে উঠেছে বন্দী নারীদের দুর্দশা, তাদের আশা-আকাঙ্খা, স্বপ্ন আর স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার বিভীষিকা। মনে হয়েছে কেউ সামনে বসে শুনাচ্ছে তার জীবনের গল্প। কথকের চোখে ফুটে ওঠা সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাহাকারের ছাপ যেন বইয়ের শব্দের দেয়ালে সুর তুলছে।
বইটি পড়তে গিয়ে বারবার চোখ ভরে উঠেছে জলে, কেঁপে উঠেছে হাত। সত্যিই এমন হয়!! এত পর হয়ে যায় নিজের পরিবার!!
এই চাপা পড়ে থাকা না জানা ইতিহাসের সাথে, সত্যের সাথে পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচয় করানোর মাধ্যম হিসেবে বইটি সার্থক।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ❝কেউ যদি বীরাঙ্গনাদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে তবে বলে দিও তাদের পিতা শেখ মুজিবর রহমান আর তাদের ঠিকানার পাশে লিখে দিও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।❞
আমরা কি মনে রেখেছি বা যথার্থ সম্মান দিতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের?
❝আজ পথে পথে কত শহীদ মিনার। কত পথ ঘাট, কালভার্ট সেতু উৎসর্গিত হচ্ছে শহীদদের নামে। শহীদদের পিতা মাতা, স্ত্রী সন্তানেরা কত রাষ্ট্রীয় সহায়তা সহানুভূতিই নয়, সম্মান পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোথায়?
একজন বীরাঙ্গনার নামে কি একটা সড়কেরও নামকরণ হয়েছে?
তারা মরে কি শহীদ হয়নি? তাহলে এই অবিচার কেন?❞ বীরাঙ্গনা রীনার এই ক্ষোভ ন্যায্য। দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের কাছে ঋণী, আফসোস! কত সহজেই না শুধু কাগজে কলমে একটা দায়সারা খেতাব ধরিয়ে দিয়েই দায়মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজেছি।
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম (১৯২১-২০০২) ছিলেন তাঁর কালের বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে, উপন্যাস নাটক ও ছােটগল্প-লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রভাবশালী ও সম্মানিত। বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ আবদুল হাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগকে যে গৌরবজনক অবস্থানে উন্নীত করেছিলেন, তাতে অধ্যপক নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী'। তাঁর জন্মস্থান খুলনা জেলায়, তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে পিএইচ ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনায় তিনি প্রগতিশীল অবস্থান নিয়ে কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও রােকেয়া হলের প্রভােষ্ট হিসেবে, বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেশে অবস্থান করে, আত্মক করেন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। কর্মজীবনে তিনি কাজ করেছেন দেশের বৃহত্তর বুদ্ধিজীবী সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। যুদ্ধোত্তর সময়টাতে তিনি বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে এবং যুদ্ধশিশুদের সুব্যবস্থার জন্য কাজ করেছেন। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমের জীবন ছিল কম।
We can not collect this book yet
Tags
PDF Download