2022 তোমার নামে সন্ধ্যা নামে pdf | সাদাত হোসাইন Book pdf
তােমার নামে সন্ধ্যা নামে সাদাত হােসাইনের লেখা অন্যতম বিখ্যাত প্রেমের উপন্যাস । বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নজর কাড়ে মানব মনের বয়সােচিত উপস্থাপন । যা গল্পের কেন্দ্রীয় দুই নারী চরিত্র নীতু কিংবা নদীর কথায় , ভাবনায় , চিন্তা , চেতনায় ফুটে উঠেছে । উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র নদী পেশায় একজন অভিনেত্রী ।
সংসারের হাল ধরতে তার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সে এই অভিনয় পেশায় আসে । নাটকের নির্দেশক রায়হান সাহেব যে তাকে পছন্দ করেন , এটা সে জানে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে । তার জীবনকে কেন্দ্র করেই ঘটনা মূলত সামনে আগাতে থাকে । নদী সম্পর্কে উপন্যাসের শেষ দিকে লেখকের বক্তব্য তুলে ধরছি- একজীবনের সবটা জুড়ে যুদ্ধই করে গেছে মানুষটা ।
সেই যুদ্ধে সে একাই যােদ্ধা । তার হাত ধরবার কেউ নেই । পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই । দিনশেষে মানুষটা অবধি নেই যার কাছে সে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে পারে । তার জন্মই যেন কেবল অন্যের জন্য । নীতুর প্রসঙ্গে আসা যাক । সে তার বয় : সন্ধিকালে একটি ভুল করে বসে । এই ভুলের জন্য তার পরিবার তার মানসিকভাবে আরােও দুর্বল করে দেয়৷
জীবনের শুরুতে হোঁচট খেয়ে সে একেবারে নিস্পৃহ হয়ে যায় । তাকে এ অবস্থা থেকে টেনে তুলতে তার বন্ধু অন্তু অনেক চেষ্টা করে । কিন্তু নীতু কোনােমতেই অন্তর সাথে আগের মতাে সম্পর্ক রাখতে চায়না । সে আস্তে আস্তে সবকিছু থকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করে । উপন্যাসের অন্যতম রহস্যময় একটি চরিত্র ফজলু মিয়ার কথা না বললেই নয় ।
নদীর অভিনিত সব নাটকে প্রযােজনা করার জন্য নদীর মনে সংশয় দানা বাঁধে , কে এই মাছ ব্যবসায়ী ফজলু ? সে কি আদৌ ভালাে না খারাপ মানুষ ? একপর্যায়ে মনে হবে মানুষটা আর যাই করুক না কেনাে তার মনটা অন্তত ভালাে এবং দয়ালু । আবার পরমুহূর্তেই তাকে সন্দেহজনক লাগতে শুরু হবে । ফজলু মিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং তার উদ্দেশ্য চিহ্নিত করতে পাঠককে শেষ পৃষ্ঠা অব্দি যেতে হবে । ভালােবাসার মতাে অদ্ভুত আর বিচিত্র জিনিস ত্রিভুবনে নেই ।
কিন্তু ভালােবাসা সবসময় হেরে যায় অভিমান , অভিযােগ , কিংবা কিছু ভুলের কারণে । কিন্তু ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক আবার পুনরায় জোড়া লাগেনা অথবা ঠিক হয়না । কিন্তু আমরা চাইলেই অভিমান , অভিযােগ , রাগ , দুঃখ এসব ভুলে আবার ডুবে যেতে পারি ভালােবাসায় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তাে এইটুকুও করা হয়ে উঠে না । তখন অভিমান ক্রমশ মানুষকে গ্রাস করে নিতে থাকে । যার বাস্তব প্রতিবিম্ব আমরা ‘ তােমার নামে সন্ধ্যা নামে ‘ উপন্যাসে দেখতে পাবাে ।
আমার মতে প্রেম ভালােবাসার গল্পের আড়ালে এই উপন্যাস আসলে কয়েকটি মানুষের হৃদয়ে অনুভব করা সুখ – দুঃখের মিশ্রণ , ক্লান্তি – বিষাদের প্রসার , অপ্রাপ্তি আর দুঃসহ দুঃখবােধের গল্প লিখেছেন প্রখ্যাত লেখক সাদাত হােসাইন ভাইয়া । নামকরণ : বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে লেখকের অনেক আগে লেখা কবিতার চারটি লাইন থেকে । বইয়ের মলাটের পেছনের পৃষ্ঠায় লিখিত সেই কবিতাটি আপনাদের সুবিধার্থে দিয়ে দিলাম এখানেও ” দূরে তখন ডুবে যাচ্ছে সূর্য । নেমে আসছে সন্ধ্যা ।
সন্ধ্যার সেই অন্ধকার নীতুর বুকের ভেতর গাঢ় অভিমানে ফিসফিস করে বলে যাচ্ছে – তােমার নামে সন্ধ্যা নামা শহর জানে রােজ কতটা আঁধার জমাই অভিমানে রােজ কতটা কান্না জমাই বুকের কোণে তােমার নামে রাত্রি গভীর শহর জানে । ” পাঠ প্রতিক্রিয়া যেহেতু আমি সাদাত হােসাইন ভাইয়ার বিশাল বড় ভক্ত তাই আমার ফিডব্যাক আপনারা সমর্থন নাও করতে পারেন । তবুও নিরপেক্ষ থেকেই বলছি অসাধারণ লেগেছে এই বইটি ।
অযাচিত কোনাে চরিত্রায়ন নেই , অতিরিক্ত কোনাে সংলাপ নেই , প্রয়ােজনের অতিরিক্ত আবেগের ঘনঘটাও নেই পুরাে উপন্যাসজুড়ে- যা আমার কাছে খুবই ভালাে লেগেছে । বইয়ের অন্যতম একটি আকর্ষণ ছিল সুকৌশলে গদ্যের মাঝে পদ্যের ব্যবহার । এই বইয়ের আকার সাদাত হােসাইনের অন্যান্য বইয়ের থেকে তুলনামূলক বড় । অনেকে অভিযােগ করেন বইয়ের দাম বেশি বলে । তবে আমার মতে , বইয়ের বাঁধাই , পেজের আকার ও মান সব দশে দশ পাওয়ার যােগ্যতা রাখে ।
তাই সব মিলিয়ে পাঠকপ্রিয়তা অর্জনের যথার্থ কারণ এই উপন্যাসে খুঁজে পেয়েছি আমি । বইয়ের যেসব লাইন হৃদয় ছুঁয়ে গেছে : তুমি আকাশের মতােই আকাশ । সবাই ভাবে সম্পর্কে সর্বক্ষেত্রে দুজনের সমান কন্ট্রিবিউশন থাকতে হবে । আমি যেমন তার জন্য এটা করেছি , ওটা করেছি , সে কেন করবে না ? সবকিছু সমান সমান হতে হবে । সবাই মনে করে এতেই বুঝি সম্পর্ক ভাল থাকে । কিন্তু বিষয়টা তা নয় । দুজনের পক্ষে কখনােই সবকিছুতে সমান কন্ট্রিবিউশন সম্ভব নয় ।
হয়তাে কোথাও একজন ষাট ভাগ করলাে , অন্যজন চল্লিশ । আবার কোথাও হয়তাে একজন দশ , অন্যজন নব্বই । এই দুজনের টা মিলেই শতভাগ সম্পর্ক । এখানে । ফিফটি ফিফটি কোনকিছুই হয়না । পৃথিবীতে ভালবাসাই বােধহয় সবচেয়ে বেশি পারস্পরিক । এটি যত্নে বাড়ে । অবহেলায় ধসর ম্লান হয়ে যায় । তাই বইটি পড়লে জানা যাবে সব কিছু ৷
Tags
Books